Home বিশেষ প্রতিবেদননীলফামারীর ভন্ড-প্রতারক নারী লাকী’র বিয়ে প্রতারণা

নীলফামারীর ভন্ড-প্রতারক নারী লাকী’র বিয়ে প্রতারণা

হাতিয়ে নিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার

by News Desk
0 comments

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
ফেসবুকে বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, প্রেম থেকে বিয়ে— এরপরই শুরু প্রতারণার এক চরম অধ্যায়। দীর্ঘ তিন বছর ধরে প্রেম ও বিশ্বাসের ফাঁদে ফেলে এক সাংবাদিকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ২৫ লাখ টাকা ও চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার। বিয়ের দুই দিনের মাথায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে নতুন আরেকটি বিয়েও করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে নীলফামারীর আসমা আক্তার লাকী নামে এক নারীর বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারী শহরের নীল প্রতিভা পাড়া (উকিল পাড়া) গ্রামের সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন প্রয়াত আলী আহাম্মদের তৃতীয় কন্যা আসমা আক্তার লাকী (৩২),। উচ্চশিক্ষিত না হলেও, ধনী ও প্রভাবশালী পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় বেশ অভিজ্ঞ তিনি। তাঁর শিকারের তালিকায় রয়েছেন সাংবাদিক, ব্যাংক কর্মকর্তা, সরকারি চাকরিজীবী ও প্রবাসীরা।

প্রতারক লাকী ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমু ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রথমে টার্গেটদের বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠান। বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে শুরু হয় প্রেমালাপ। বিশ্বাস স্থাপনের কৌশল হিসেবে তিনি ছেলেদের মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড পাঠানো, বিকাশ বা নগদে দুই-তিন হাজার টাকা উপহার দেওয়া ইত্যাদি ব্যবহার করেন— যাতে নিজেকে “বিশ্বস্ত প্রেমিকা” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।

২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী (ছদ্মনাম) পথিক আহম্মেদ-এর ফেসবুক আইডিতে লাকীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। গ্রহণের পর এক সপ্তাহের মধ্যেই মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে তাদের আলাপ শুরু হয়। এরপর নিজের পারিবারিক কষ্ট ও বঞ্চনার গল্প বলে পথিক আহম্মেদকে আবেগে জড়িয়ে ফেলেন লাকী।

লাকী বলেছিল— তাঁর ভাই নেশাগ্রস্ত, নীলফামারী জজ কোর্টে মুহুরি গিরি করে (আইনজীবী সহকারী), মা হার্টের রোগে অসুস্থ, ছোট বোনেরও বিয়ের উপযুক্ত বয়স হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাঁরও বিয়ে হয়নি; তাই এমন একজন পুরুষ চান যিনি পরিবারটির দায়িত্ব নেবেন। এসব গল্পের বিশ্বাসে ফেলে পথিক আহম্মেদের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সম্পর্ক গভীর হলে লাকী বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং শর্ত দেন, বিয়ের পর নীলফামারীতেই থাকতে চান। এজন্য পথিক আহম্মেদকে ঢাকা থেকে ব্যবসা গুটিয়ে জমি কিনে বাড়ি নির্মাণের পরামর্শ দেন।

লাকীর কথামতো পথিক আহম্মেদ ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদের ব্যবসা বিক্রি করে দেন এবং ২০২৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নীলফামারীর বড় মাঠে দেখা করে তার হাতে প্রথমে ১৫ লাখ টাকা তুলে দেন। পরে ১৬ ডিসেম্বর নীলফামারীর ওসমানী উদ্যানে আবার ১০ লাখ টাকা ও চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার (হার, বালা, ঝুমকা, নাকফুল) দেন লাকীর হাতে।

এরপর ২০২৫ সালের ১২ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নীলফামারী শহরের মাস্টারপাড়ার কাজী অফিসে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর এক বন্ধুর বাসায় ফুলশয্যাও হয়। কিন্তু বিয়ের মাত্র চার ঘণ্টা পরই লাকী অসুস্থ মায়ের অজুহাতে নিজ বাড়িতে চলে যান— আর ফিরে আসেননি।

পথিক আহম্মেদ বলেন, “বিয়ের দু’দিন পরেই সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে জানতে পারি, সে আমাকে তালাক না দিয়েই নীলফামারী সদরের পলাশবাড়ীতে আরেকটি বিয়ে করেছে। এখন বুঝলাম, তাঁর পুরো ঘটনাটাই ছিল পরিকল্পিত প্রতারণা।”

তিনি বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে আসমা আক্তার লাকীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ০১৭৮৮২৭৩৪০৪ ও ০১৭৪৭৮৬০৯৩২-এ যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

You may also like

Leave a Comment