দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে আগামী ১৫ অক্টোবর স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত জুলাই সনদ। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত এ ঐতিহাসিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
জুলাই সনদকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দল দুটির মতে, এটি অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জনগণের বহুল প্রত্যাশিত উদ্যোগ, যা রাজনৈতিক সমঝোতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি এবং কমিশনের প্রস্তাবনা–সংক্রান্ত নোট অব ডিসেন্টের সঙ্গে সমন্বয় ঘটার পরই তারা স্বাক্ষর করবে।
রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ঐকমত্য কমিশনের কাছে ৩০টি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষরের জন্য দুজন করে প্রতিনিধি মনোনীত করে নাম পাঠিয়েছে। তবে দলগুলোর মধ্যে গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পদ্ধতি নিয়ে কিছু মতবিরোধ রয়ে গেছে।
কমিশনের সুপারিশে বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বিষয় আগে পর্যালোচনা করতে চায় দলগুলো। তবে তারা আশাবাদী—আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে সমঝোতা হয়ে যাবে, এবং সব দল ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সনদে স্বাক্ষর করবে।
শুক্রবার রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, “১৫ অক্টোবর স্বাক্ষর হতে যাওয়া জুলাই সনদকে বিএনপি ইতিবাচকভাবে দেখছে। আমরা বিশ্বাস করি, আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক ঐক্য ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিএনপি আলোচনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “জুলাই সনদ জাতির বড় প্রত্যাশা। আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। তবে কিছু ইস্যু এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে, সেগুলো মীমাংসা হলেই স্বাক্ষর করব।”
তিনি আরও জানান, সনদে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।
“জনগণ গণভোটে যে মত দেবে, জামায়াতে ইসলামী সেটিই মেনে নেবে,” — যোগ করেন তিনি।
এদিকে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবনা ও নোট অব ডিসেন্টের মধ্যে সমন্বয় না হলে এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে না।”
তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, “উচ্চকক্ষে পিআর বিষয়ে এনসিপি কোনো ছাড় দেবে না। প্রয়োজনে নির্বাচনের আগেই এ ইস্যুতে গণভোটের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।”
জুলাই সনদ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৭২টি বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন।
গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর সরকার ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়।
এরপর তিন ধাপে বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হয়—
২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৪টি,
৩ জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ২৩টি,
এবং ১ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও ৫টি বৈঠক।
সবশেষে কমিশন এখন সনদের চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করেছে, যা ১৫ অক্টোবর স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হবে।
